মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:২৬ পূর্বাহ্ন
পিরোজপুর প্রতিনিধি॥ বাবার স্নেহ আর মায়ের ভালোবাসা ছোটবেলা থেকেই অনেক শিশুর ভাগ্যে মেলে না। আর এমন বাস্তবতাকে মেনে নিয়েই বেড়ে উঠতে হয় শিশু পরিবারের সব শিশুকে। সরকারি শিশু পরিবারে ঠাঁই হয় বাবা-মা নেই অথবা মা আছে বাবা নেই এমন অনেক শিশুদের।
পিতৃমাতৃহীন বা পিতৃহীন এতিম শিশুদের ভরণপোষণ, শিক্ষা, প্রশিক্ষণ এবং উপযুক্ত মর্যাদায় সমাজে পুনর্বাসনের জন্য সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় নিয়ন্ত্রণাধীন সমাজসেবা অধিদফতরের মাধ্যমে সরকারি শিশু পরিবার পরিচালনা করছে সরকার।
তবে পিরোজপুর সরকারি শিশু পরিবারে (বালিকা) দেখা দিয়েছে চরম আবাসন সংকট ও লোকবল সংকট। এই প্রতিষ্ঠানে দীর্ঘ দুই বছর ধরে মূল ভবন না থাকায় ছোট দুটি জরাজীর্ণ ভবনে শিশু ও স্টাফদের মিলেমিশে কষ্ট করে থাকতে হচ্ছে।
শিশুদের দেখাশোনার জন্য ১৯ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর পদ থাকলেও শূন্য রয়েছে ১১টি পদ। এতে ব্যাহত হচ্ছে শিশুদের মৌলিক অধিকার বাস্তবায়ন। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, খুব দ্রুত সব সংকট সমাধানে উদ্যোগ নেয়া হবে।
জেলা সমাজসেবা অধিদফতর তথ্যসূত্রে জানা যায়, পিরোজপুরে ১৯৭৩ সালে শিশু পরিবারটি প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর ২০১৮ সালে সদনের মূল আবাসিক ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে গণপূর্ত অধিদফতর।
ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণার এক বছর পর ২০১৯ সালে ভবনটি ভাঙার কাজ শুরু হয়। এরপর থেকেই দেখা দেয় চরম আবাসন সংকট। ফলে শিশু ও স্টাফরা ভাগাভাগি করে বসবাস করেন ছোট দোতলা দুটি জরাজীর্ণ ভবনে। শিশু শিক্ষার্থীদের দাবি, বসবাস করার মত একটি বাসস্থান ও সুন্দর পরিবেশের দরকার।
সরকারি শিশু সদনের ছাত্রী সাদিয়া আক্তার ও নুসরাত জাহান জানান, আমরা এখানে ঠিকমতো খাবার, খেলাধুলা ও পড়াশোনা করতে পারলেও থাকার জায়গা নিয়ে আছে নানা সমস্যা। আমরা যে ভবনে থাকি সেটা ভাঙা, সেখান থেকে পানি পড়ে। আমাদের কষ্ট করে এক কক্ষে চারজন থাকতে হয়। শিশু পরিবারে আমরা বাইরের থেকে ভালো থাকি। নতুন ভবনটি হলে আমরা আবাসন সমস্যাটি থেকে মুক্তি পাবো। শুধু আবাসন সমস্যাই নয় লোকবলেও রয়েছে সংকট। ১০০ শিশুদের দেখাশোনার জন্য ১৯ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী থাকার কথা থাকলেও সেখানে ১১টি পদই শুন্য। মাত্র ৮ জন দিয়ে পরিচালিত হচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি।
শিশু পরিবারের উপ-তত্ত্বাবধায়ক শাবানা খানম জানান, দুটি বিষয়ে সংকট থাকলেও শিশুদের শিক্ষা ও প্রশিক্ষণসহ বাকি সুবিধাগুলো পাচ্ছে শিশুরা।
জেলা সমাজসেবা অধিদফতরের উপ-পরিচালক কে. এম. আখতারুজ্জামান বলেন, আবাসন ও জনবল সংকটের কথা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। শিশু পরিবারের নতুন ভবনের কাজ খুব শীঘ্রই শুরু হওয়ার কথা রয়েছে।
পিরোজপুর সরকারি শিশু পরিবারে প্রতিটি শিশুর জন্য প্রতি মাসে খাদ্য জ্বালানি ও দুধ বাবদ দুই হাজার ৫শ’ টাকা, শিক্ষা সহায়ক উপকরণ ও খেলাধুলা বাবদ ৩শ’ ৫০ টাকা, প্রশিক্ষণ বাবদ ১শ’ টাকা, সাধারণ পোশাক পরিচ্ছদ ৩শ’ টাকাসহ মোট তিন হাজার ৫শ’ টাকা খরচ বরাদ্দ থাকে। এখানে ১শ’ শিশুর আসন সংখ্যা থাকলেও আবাসন সংকট থাকায় বর্তমানে থাকার জায়গা পেয়েছে ৭০ জন।
Leave a Reply